
ভোলা জেলার মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি রূপালী দ্বীপ মনপুরা। মেঘনার কোলে লালিত চর্তুদিকে নদীবেষ্টিত সবুজ শ্যামলিয়ায় ঘেরা। চতুর্দিকে ভেড়িবাঁধ, ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগান। এছাড়া মূল ভূখ-ে রয়েছে শত শত হরিণের অবাধ বিচরণ।
মনপুরা উপজেলা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের কাছে যেমন আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জায়গা’ তেমনি বিদেশিদের কাছেও। যেসব জেলার বা বিভাগের লোকজন মনপুরা ভ্রমণে বা কাজের জন্য এসেছেন তারা এখানকার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এবং এখানকার মানুষকে ভালোবেসেছেন। এখানে না এলে বোঝাই যাবে না, সবুজের দ্বীপ মনপুরায় কি সৌন্দর্য লুকায়িত আছে। পর্যটনের কি অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে এ দ্বীপে। পর্যটক আর ভ্রমণপিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেওয়ার বহু উপকরণ রয়েছে এখানে । পূর্বদিকে সকাল বেলার সূর্যকে যেমন হাসতে হাসতে উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেল বেলাতেও আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়। মনপুরায় এসে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রতিদিন শত শত হরিণ মূল ভূখ-ে ও বিভিন্ন চরে অবাধ বিচরণ করে। ভোলা জেলা সদর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে মেঘনার মোহনায় চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলা। এখানে প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। মিয়া জমিরশাহ’র স্মৃতি বিজড়িত মনপুরা দ্বীপ অতি প্রাচীন। এক সময় এ দ্বীপে পুর্তগীজদের আস্তানা ছিল। তারই নিদর্শন হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় কেশওয়ালা কুকুর। মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ম্যনগ্রোভ প্রজাতির সারিসারি বাগান।
মনপুরায় ছোট বড় ১০-১৫ টি চর ও বন বিভাগের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যাম্পাস মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। শীত মৌসুমে শতশত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে এসব চরাঞ্চল। এই চরগুলো হলো চর নজরুল, চর পাতালিয়া, চরপিয়াল, চরনিজাম, চর সামসুউদ্দিন, লালচর, ডাল চর, বদনার চর ও কলাতলীর চর। মনপুরা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে মনপুরা ফিশারিজ লিমিটেড। খামারবাড়িতে সারি সারি নারিকেল গাছ ও বিশাল-৪-৫ টি দীঘি পুকুর রয়েছে।
দৃষ্টিনন্দন খামার বাড়িটি হতে পারে পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ। খামার বাড়ির পূর্ব পাশেই বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাগান। এখানে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই দেখা যায় না এখানে খাবারের রীতিমতো আইটেম ছাড়াও বিশেষ বিশেষ কিছু খাবার লক্ষ করা যায়। শীতের হাঁস, মহিষের দুধের কাঁচা দই, টাটকা ইলিশ, বড় কই, মাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি। মেঘনা নদী থেকে ধরে আনা টাটকা ইলিশ ও চর থেকে আনা মহিষের কাঁচা দুধের দইয়ের স্বাদই আলাদা।
মনপুরার মূল ভূখ-ের ম্যানগ্রোভ বনে দেখতে পাওয়া যায় হরিণের পাল। প্রতিদিন বিকেল বেলা এসব হরিণ দেখতে পর্যকটরা ভিড় করেন। মূল ভূখ-ে চরফৈজুদ্দিন টু সাকুচিয়ার মাঝখানে রয়েছে বিশাল সেতু। প্রতিদিন বিকেলবেলা ভ্রমণপিপাষুরা এই সেতুটি দেখার জন্য ভিড় করেন।
ঐতিহাসিক বেভারিজ মনপুরার নামকরণ নিয়ে লিখেছেন, জনৈক মনগাজি নামের ব্যক্তি সে সময়ের জমিদার থেকে মনপুরা জমি লিজ নেন অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে। তখন তার নামানুষারে এ দ্বীপের নামকরণ হয় মনপুরা। মনগাজি বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারানোর পর তার নামানুসারে এলাকার নামকরণ করা হয় মনপুরা। তবে স্থানীয়দের মতে এখানকার খাঁটি দুধ খেয়ে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা দেখে মানুষের মন ভরে যেত। এজন্য এর নামকরণ করা হয় মনপুরা। তবে মনপুরার নামকরণ নিয়ে এখনও মতবিরোধ রয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে মনপুরার এসেছিলেন। তিনি মনপুরার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মনপুরায় বঙ্গ বন্ধুর চিন্তানিবাস করতে চেয়েছিলেন। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর পর আর সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।
মনপুরার মানুষ সহজ সরল প্রকৃতির। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে বসবাস করে। এখানকার মানুষ অতিথিপরায়ন। অল্প সময়ের মধ্যে যে কাউকে আপন করে নেয়। এখানকার মানুষ কৃষি ও মৎস্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। মনপুরার শতকরা ৮০% লোক কৃষক ও মৎস্যজীবী।
রূপালী সৌন্দর্যের দ্বীপ মনপুরার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রশাসনের সাথে আলাপ হয় মনপুরার পর্যটন সমস্যা ও স¤ভাবনা নিয়ে। আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শাহজাহান মিয়া বলেন, এখানকার পর্যটনের অপার সম্ভাবনা নিয়ে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা নিবাস বাস্তবায়নে জন্য তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মনপুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি মিসেস শেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার একটি স্বপ্ন মনপুরাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।
* আব্দুর রহিম:ইনফোলিডার, আমিনাবাদ, ইউডিসি, চরফ্যাশন, ভোলা
protik/mohin
মন্তব্য (০)