অনলাইনে পর্চা বাঁচিয়ে দিল খরচা

প্রতীক মাহমুদ : ইনফোলিডার, ইউডিসি, নকলা, পিরোজপুর
প্রকাশ কাল : ২০১৭-০৬-১০ ১২:৩৪:২৪


porcha
porcha

দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন বেশ জমি-জমার মালিক। কিন্তু তার অধিকাংশ জমিই অন্য লোকে জবরদখল করেছে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। সবাই জমির পর্চা দেখতে চান। তোফাজ্জল ঠিক করেন পর্চা তোলর জন্য ডিসি অফিসে গিয়ে আবেদন করবেন। কিন্তু সেখানেও ভোগান্তি অনেক। পর্চা তোলার ফি, যাতায়াত খরচা এবং ডেলিভারি পাওয়া নিয়ে হয়রানিতো আছেই, সেই সংগে উপরি পাওনা নিয়ে আছে দালালের উপদ্রব। সরকারি অফিসগুলোতে কিলবিল করে দালাল। নতুন কাউকে পেলে একেবারে খাবলে খেতে চায়। এ কারণে কিছুটা দমে যান তোফাজ্জল। দ্রুত তার এ সমস্যার সমাধান করে দেন প্রতিবেশি কেরামত আলী। তিনি একদিন খবর নিয়ে আসেন মুকুন্দপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গেলেই এই সমস্যার সমাধান মিলবে। একথা শোনার পর দেরি করেননি তোফাজ্জল। একবুক আশা নিয়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে হাজির হন। সেখানে কথা হয় ইউডিসি উদ্যোক্তা লক্ষ্মী রানী রায়ের সংগে। তার কথা শুনে তোফাজ্জল হোসেনের বুক থেকে পাথর নেমে যায়। লক্ষ্মী রানী তাকে পর্চার জন্য খতিয়ান নং, দাগ নং এবং মৌজার নাম দিয়ে ৫টি আবেদন করার কথা বলেন। তফাজ্জল হোসেন পুটলি এগিয়ে দেন। তার কাগজপত্র দেখে লক্ষ্মী রানী তাৎক্ষণিক পাঁচটি পর্চার তথ্য অনলাইনে পূরণ করে ডিসি অফিসের সার্ভারে পাঠান। আর একটি রিসিভ কপি তোফাজ্জল হোসেনের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে বলেন, ‘চাচা এই নিন আপনার রিসিট, আর ৫০০ টাকা দিন, প্রতি খতিয়ান ১০০ টাকা করে। ১২ দিন পর এসে পর্চা নিয়ে যাইয়েন।’ তোফাজ্জল হোসেন অবাক হন, এত কম খরচে, এত তাড়াতাড়ি পর্চা পাওয়া যাবে! লোকেতো মাসের পর মাস ঘুরে পর্চা বের করে। লক্ষ্মী রানী তাকে আশ্বস্ত করেনÑ ‘চাচা এখানে আমার কোন কেরামতি নেই, সরকার যে ডিজিটালাইজেশনের ব্যবস্থা করেছে এ তার সুফল। জমিজমার সব তথ্য কম্পিউটারের সার্ভারে জমা করা হয়েছে। খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, মৌজার নাম লিখে সার্চ দিলেই কম্পিউটারের স্ক্রিনে ভেসে উঠবে প্রয়োজনীয় সব তথ্য। আগের মতো আর বাঁধাই করা বড় খাতা বের করে একটার পর একটা খুঁজতে হয় না। সবকিছু ডিজিটাল হওয়ায় সময় কমেছে, খাটনি কমেছে, আর লোকজনকে হয়রানও হতে হচ্ছে না আগের মতো।

১২ দিন পর তোফাজ্জল হোসেন মুুকুন্দপুর ইউডিসিতে এসে পর্চা পাঁচটি পেয়ে মহাখুশি। তিনি লক্ষ্মী রানীকে চা-মিষ্টি খাওয়াবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন।। লক্ষ্মী বলেন, ‘চাচা আমি আপনাকে সময়মত পর্চা দিতে পেরেছি তাতেই খুশি। এতেই আমার মিষ্টি খাওয়া হয়ে গেছে’। তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি কত হয়রান হয়েছি। দিনাজপুরে একবার আবেদন করার জন্য গেছিলাম, তারপর কয়েকবার ঘুরে প্রায় তিন মাস পর পর্চা হাতে পেয়েছি, আবার তিনটি খতিয়ানের বেশি আবেদন করা যায় না, এর উপর দালালের উৎপাত তো আছেই।

মুকুন্দপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা জানান, কাহারোল উপজেলায় ৬ টি ডিজিটাল সেন্টারের মধ্যে তার সেন্টারেই বেশি অনলাইনে পর্চার আবেদন হয়। ছয়টি ডিজিটাল সেন্টারের মধ্যে এটি প্রধান সেন্টার। ডিসি অফিসের ই-সেবা কেন্দ্র থেকে জারিকারক লোকমান হোসেন এই সেন্টারে সপ্তাহে একদিন এসে পর্চা পৌঁছে দেন। বাকি পাঁচটি সেন্টারের উদ্যোক্তারা তাদের পর্চাও এখানে এসে নিয়ে যান।

লক্ষ্মী রানী জানান, অনলাইনে পর্চার আবেদন থেকে আয় করে তিনি সাবলম্বী হয়েছেন। উপার্জনের জন্য ঘরের বাইরে যেতে হয়নি। এটাই বড় পাওয়া। সংসারের প্রয়োজন মিটিয়েও কিছু টাকা থাকছে। সেই সংগে এলাকার জনগণও উপকৃত হচ্ছে। তাদের টাকা, সময় ও খরচ বেচে যাচ্ছে। সেই সংগে দালালের খপ্পরসহ নানারকম হয়রানির হাত থেকে রেহাই পেয়ে জমির পর্চা তুলে নিজের প্রয়োজন মিটাচ্ছে।

* লক্ষ্মী রানী:ইনফোলিডার, মুকুন্দপুর ইউডিসি, কাহারোল, দিনাজপুর


protik/mohin

মন্তব্য  (০)

মন্তব্য করুন