গৌরনদীর সাউদের খাল। একসময় এ খাল দিয়ে যাতায়াত করত এলাকার লোকজন। পাশাপাশি এর পানি দিয়ে চারটি গ্রামের কয়েক হাজার একর জমিতে চাষাবাদ করা হতো। এ খালের মাছেই এলাকাবাসীর চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু দীর্ঘদিনেও পুনর্খনন না হওয়ায় পলি জমে এটি মরা খালে পরিণত হয়। ফলে বছরের পর বছর ধরে চারটি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার কৃষক জলাবদ্ধতা ও প্রকৃতিক বৈরি আচরণে আমন চাষ করতে পারেনি। পানির অভাবে সময়মতো বোরো ধানও চাষ করা সম্ভব হয়নি।
কথাগুলো বলছিলেন স্থনীয় বার্থী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান প্যাদা। খালটির অবস্থান বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশর্^বর্তী গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের কৃষিনির্ভর তাঁরাকুপি, কটকস্থল, সাউদের খালপাড় ও বার্থী গ্রামের মধ্যে। এটি পুনর্খননের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধেদের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন। অবশেষে সরকারের মৎস্য অধিদফতরের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রলাণয়ের অর্থায়নে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে সাউদের খালের ৪.৪২ হেক্টরের মরাখাল পুনর্খনন করে মাছের পোনা অবমুক্ত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ফলে কৃষিতেও বিপ্লব ঘটবে।
স্থনীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন সমিতির মাধ্যমে সরকারের ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক স্ক্রেভেটারের সাহায্যে ২.৯৫ হেক্টরের জলায়তন ও ৪৪ হাজার ৯৯১ ঘণমিটার মাটি খনন করে পুরো ৪.৪২ হেক্টরের মরাখাল পুনর্খনন করা হয়। ফলে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে দীর্ঘদিনের মরা খালে ফিরে এসেছে পূর্ণ যৌবন। জনগুরুত্বপূর্ণ সাউদের খালে এখন টলমল করছে স্বচ্ছ পানি। আর এ কারণেই হাসি ফুটেছে ওই চার গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার বাসিন্দার মধ্যে। চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষকরা এখন উজ্জ্বল আগামীর স্বপ্ন দেখছেন।
স্থানীয় কৃষক ও ইউপি সদস্য বজলুর রহমান, খাইরুল আহসান খোকন, আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার বেগসহ একাধিক কৃষক বলেন, যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খাল বিল ভরাট করে দখল বাণিজ্য চলছে, ঠিক তার উল্টো ঘটনা ঘটেছে বার্থী ইউনিয়নে। মরা খাল পুনর্খননের মাধ্যমে সাউদের খাল ভূমিহীন সমিতির দলনেতা হাফিজুর রহমান ও জহিরুল হক চৌধুরী চার গ্রামের কৃষকদের সমৃদ্ধি বয়ে আনার সুযোগ করে দিয়েছেন। খননকৃত খাল এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান প্যাদা বলেন, মানচিত্রে জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালটির পরিসর ছিল আরও বিস্তৃত। দীর্ঘদিনেও খালটির সংস্কার না হওয়ায় খালটি মরা খালে পরিণত হয়। যে কারণে বছরের পর বছর কৃষকরা জলাবদ্ধতায় আমন চাষ করতে পারেননি, আবার পানির অভাবে সময়মতো বোরো ধানও চাষ করতে পারেননি। তিনি বলেন, সরকারিভাবে মরা খালটি পুনর্খননের মাধ্যমে এখন থেকে ওই চার গ্রামের চাষিরা জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করে আমন ধান চাষাবাদ ও সময়মতো বোরো চাষাবাদও করতে পারবেন। এ খালে মাছের পোনা অবমুক্ত করার পর মাছে-ভাতে বাঙালির হারিয়ে যাওয়া প্রবাদটি আবার মুখে মুখে ফিরে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
* নাদিরা ইসলাম: ইনফোলিডার, সালিয়াবাকপুর ইউডিসি, বানারীপাড়া, বরিশাল
protik/mohin
মন্তব্য (০)