চলনবিল হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

মোমেনীন : ইনফোলিডার, বাগাট ইউডিসি, মধুখালী , ফরিদপুর
প্রকাশ কাল : ২০১৭-০৭-১৭ ১৬:০৫:১৭


চলনবিল হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র
চলনবিল হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

মো. মাহমুদুল হাসান, ইনফোলিডার, রায়দৌলতপুর ইউডিসি, কামারখনা, সিরাজগঞ্জ

চলনবিল সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের কমবেশি জানাশোনা আছে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে মৎস্যপ্রেমীদের বেশি জানা আছে চলনবিল কি এবং কেন। ভ্রমণপিপাসু মানুষকে আকৃষ্ট করে দেশের বৃহৎ এই বিল। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর এই তিনটি জেলার সংযোগস্থলে যে বিশাল নিম্ন জলাভূমি এরই নাম চলনবিল। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই নিম্ন জলাভূমি এককালে মাছ ও দেশি-বিদেশি পাখির জন্য ছিল বিখ্যাত। এখন মুক্ত জলাশয়ের মাছের সংখ্যা কমে গেলেও তা একেবারেই ফুরিয়ে যায়নি। যে বিশাল এলাকা নিয়ে এই বিলাঞ্চল তার মধ্যে রয়েছে সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, সলঙ্গা, উল্লাপাড়া ও তাড়াশ উপজেলা। এই নয়টি উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের আয়তন প্রায় ১ হাজার ১৫০ বর্গ কি.মি। লোক সংখ্যা ৩০ লক্ষাধিক। এই বিলের কূল কিনারাহীন ঢেউ বর্ষায় ভ্রমণপিয়াসি মানুষকে মুগ্ধ করে। চলনবিলের মধ্য দিয়ে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে বর্ষা মৌসুমের প্রায় প্রত্যেক দিন দেশি-বিদেশি পর্যটক বিলের মুগ্ধতা অনুভব করে। অনেকের মতে এখানে যদি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় তাহলে তা কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন বা কুয়াকাটার চেয়ে কোনো অংশে কম দর্শনীয় স্থান হবে না। এক সময় এই বিলাঞ্চলে মানুষের বসবাস ছিল না। কালক্রমে নদীবাহিত পলি মাটির চর গড়ে ওঠে বিলের নানা জায়গায়। আর সেখানে সাহসী মানুষ মাছ ও পাখির লোভে চলনবিলের মাঝে পুকুর বা দিঘি খনন করে তার পাড়ে গড়ে তুলেছে বসবাস করার জন্য গ্রাম। এখানকার বিশাল বিশাল দিঘির মধ্যে রয়েছে জয়সাগর দিঘি, উলিপুর দিঘি, তাড়াশের কুঞ্জবন, নওগাঁয় ভানুসিংহ দিঘি, বাজার দিঘি, মথুরাদিঘি, ধানচালা দিঘি, দেবীপুরের ভটের দিঘি, মুনিয়াদিঘি, শীতলাই জমিদার বাড়ির দিঘী, সগুনা দিঘি, সুলতানপুর দিঘি, ভায়াটের দিঘী ও উনুখার দিঘী। তাছাড়া বড় বড় পুকুর কত রয়েছে তার হিসাব নিকাশ নেই। এসব দিঘি ও পুকুর এখন মৎস্য চাষের ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে।চলন বিলের সৌন্দর্য

চলনবিলাঞ্চলের মাছ বিক্রি করার জন্য বিলের এক প্রান্তে বিশ্বরোড সংলগ্ন মহিষলুটি বাজারে গড়ে উঠেছে বিশাল মৎস্য আড়ৎ। সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত এ আড়তে মনোমুগ্ধকর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ- যেমন পবা, কৈ, বাচা, চিতল, কাতল, বেলে, বৌ মাছ, বাশপাতা, সোল-গজার, রুই, মাগুর, টেংরা, পুঁটি, আইড়, বোয়াল, ফলি, চিংড়ি, টাকি, বাইন মাছ পাওয়া যায়। বিলের আকাশে রাতের তারা মানুষকে প্রাণবন্ত করে। চলনবিলাঞ্চলের আরও দেখার মতো চাটমোহরের শাহী মসজিদ, হরিপুরের প্রমথ চৌধুরীর জন্মস্থান, জোনাইলে খ্রিস্টান গির্জা, শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী, শাহজাদপুরে শাহ-মোকদুমের মাজার, তাড়াশের লাল মন্দির, বিনসাড়ায় বেহুলার কূপ, হান্ডিয়ালের জগন্নাথ মন্দির, তাড়াশের দক্ষিণে ষোড়শ শতাব্দিতে তৈরি নশরত শাহের আমলে পাথরের তৈরি মসজিদ, নওগাঁয় শাহ শরীফ জিন্দনী (রঃ)’র মাজার, পাশেই পশ্চিমে আরও একটি ভাঙ্গা মসজিদসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন এতটাই কারুকার্যে তৈরি, যা পর্যটকদের মুগ্ধ না করবেই। প্রবাদ আছে, বিল দেখতে চলন, গ্রাম দেখতে কলম-আর শিব দেখতে তালম। এই তিনটি দেখার জিনিস চলনবিলের মাঝেই দেখতে পাওয়া যায় ।

চলন বিলের সৌন্দর্য


momenin/mohin

মন্তব্য  (০)

মন্তব্য করুন