নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি

মোমেনীন : ইনফোলিডার, বাগাট ইউডিসি, মধুখালী , ফরিদপুর
প্রকাশ কাল : ২০১৭-০৭-২২ ১৬:৪০:১৫


নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি

আরিফ রাঙ্গা, ইনফোলিডার, রাঙামাটি

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র এখানে অবস্থিত। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই রাঙামাটি পার্বত্য জেলা ২২০-২৭ ও ২৩০-৪৪ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১০-৫৬ ও ৯২০-৩৩ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে এর অবস্থান। রাঙামাটির উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম। দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে মিজোরাম ও পশ্চিমে চট্টগ্রাম এবং খাগড়াছড়ি। এ জেলা আয়তনের দিক থেকে দেশের বৃহত্তম জেলা। দেশের একমাত্র রিকশাবিহীন ও হ্রদ পরিবেষ্টিত পর্যটন শহর। এ জেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, বোম, খুমি, খেয়াং, চাক্, পাংখোয়া, লুসাই, সুজেসাওতাল, রাখাইন সর্বোপরি বাঙালিসহ ১৪টি জনগোষ্ঠী বসবাস করে।

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা। এর আগের নাম ছিল কার্পাস মহল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়িকে পৃথক জেলা ঘোষণা করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার মূল অংশ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথাগত রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় রয়েছে চাকমা সার্কেল চিফ। চাকমা রাজা হলেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান।

রাঙামাটির মোট আয়তন ৬ হাজার ১১৬.৩ বর্গ কি.মি। কর্ণফুলী, থেগা, হরিণা, কাসালং, শুভলং, চিঙ্গড়ি ও কাপ্তাই নদী এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জেলার প্রধান নদী কর্ণফুলী। এ নদী ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে রাঙামাটির উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ঠেগা নদীর মোহনা হয়ে এ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। কর্ণফুলীর উপনদীগুলো হলো- কাঁচালং, চেঙ্গী, ঠেগা, বড় হরিণা, সলক, রাইনখ্যং ও কাপ্তাই। এ উপনদীগুলোতে বর্ষাকালে যথেষ্ট খরস্রোতা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়।

রাঙামাটি পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড ও ৩৫টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। শহরের মোট আয়তন ৬৪.৭৫ বর্গ কি.মি। ১৯৮৩ সালে রাঙামাটি জেলার মর্যাদা পায়। এ জেলায় ১০টি উপজেলা, ৫০টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১৬২টি মৌজা ও ১ হাজার ৩৪৭টি গ্রাম আছে। রাঙামাটি জেলার ১০টি উপজেলা। এগুলো হচ্ছে- কাউখালী, কাপ্তাই, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, রাঙামাটি সদর, রাজস্থলী ও লংগদু।

যতটুকু জানা যায়, মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ত্রিপুরা ও আরাকান রাজাদের যুদ্ধক্ষেত্র ছিল রাঙামাটি। ১৬৬৬ সালে এই অঞ্চল মুঘলদের দখলে আসে। ১৭৩৭ সালে শের মোস্তা খান নামক গোত্র প্রধান মুঘলদের দয়ায় এখানে আশ্রয়  পান। সেই থেকে চাকমারা ও পরবর্তী সময়ের আদিবাসীরা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। অন্য আদিবাসীদের ভেতর বোম, চাক, খুমি, খেয়াং, লুসাই, মো, মুরাং, পাঙ্কু, সান্ডাল, মণিপুরিরা প্রধান। ১৭৬০-৬১ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া হয়।

এককালের পশ্চাৎপদ এই এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দুটি সরকারি কলেজ, ১৪টি বেসরকারি কলেজ, ৬টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ৪৫টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ২৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬১টি মাদ্রাসা ও ৭টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর সুফল পাচ্ছে পাহাড়িরা। তারা এখন শিক্ষায়-চাকরিতে যথেষ্ট অগ্রসর। ধান, পাট, আলু, তুলা, ভুট্টা ও সরিষা হচ্ছে এ অঞ্চলের প্রধান শস্য এবং প্রধান ফল হচ্ছে আম, কাঁঠাল, কলা, আনারস, লিচু ও কালো জাম।

চন্দ্রঘোনা কাগজের কল এখানে অবস্থিত। এছাড়া রয়েছে রেয়ন মিল, প্লাইউড কারখানা, জল-বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ঘাগড়া বস্ত্র কারখানা। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে- কাপ্তাই হ্রদ, রাজা জং বসাক খানের দীঘি ও মসজিদ, রাজা হরিশ চন্দ্র রায়ের আবাসস্থলের ধ্বংসাবশেষ, ঝুলন্ত সেতু, বুদ্ধদের প্যাগোডা, রাজবন বিহার, শুভলং ঝর্ণা ও সাজেক পাহাড়।

সব ঋতুতেই এখানে বিচরণ দেশি-বিদেশি পর্যটকের। এখানে বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকেই আসা-যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন উন্মুক্ত।


momenin/mohin

মন্তব্য  (০)

মন্তব্য করুন