দূরপাল্লার সাঁতারে রেকর্ড গড়লেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য

মোমেনীন : ইনফোলিডার, বাগাট ইউডিসি, মধুখালী , ফরিদপুর
প্রকাশ কাল : ২০১৭-০৮-০৭ ১৩:৫১:৩৭


দূরপাল্লার সাঁতারে রেকর্ড গড়লেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য
দূরপাল্লার সাঁতারে রেকর্ড গড়লেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য

পরিতোষ দাস, ইনফোলিডার, মদন ইউডিসি, নেত্রকোনা

প্রবল ইচ্ছা এবং অদম্য মনোবল থাকলেই সব কিছু করা সম্ভব। এর অন্যতম উদাহরণ মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। ৪৩ ঘন্টা বিরামহীন সাঁতার কেটে ১৪৬ কিলোমিটার নদী পথে পাড়ি দিয়ে রেকর্ড গড়লেন তিনি।

৬৬ বছর বয়সী এই সাঁতারু গত শুক্রবার (৪ আগস্ট, ২০১৭) বিকাল ৬ টা ৫০ মিনিটে ময়মনসিংহের ফুলপুর ঠাকুর বাঘাই ঘাট সরচাপুর ব্রিজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সাঁতার শুরু করেন। বিরামহীন ৪৩ ঘণ্টা দূরপাল্লার সাঁতার কেটে দুই দিন দুই রাত্রি পর রোববার দুপুর ১ টা ৫০ মিনিটে নেত্রকোনার মদন উপজেলার মগড়া ব্রিজে এসে পৌঁছান ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। এ সময় মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়ালীউল হাসান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম আকন্দ, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল কদ্দুছ, সাধারন সম্পাদক আবুল বাশার খান এখলাছ, পৌর মেয়র আব্দুল হান্নান তালুকদার শামীম, আওয়ামীলীগ নেতা বিমান বৈশ্যের নেতৃত্বে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার উৎসুক জনতা তাঁকে বরণ করে নেয়। পরে পানি থেকে তুলে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যকে এম্বুলেন্স যোগে বেসরকারি হাসপাতাল সুমাইয়া হেলথ কেয়ার সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তাঁর শ্বাস প্রশ্বাসে কিছুটা সমস্যা হলে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়।

সাঁতার শেষে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর রোববার বিকালে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য জানান, সকলের আর্শীবাদে আমি সাঁতার শেষ করেছি। অদম্য ইচ্ছা থাকলে সবকিছু করা সম্ভব। নতুন প্রজন্মকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিলে তারাও ভাল করবে। আমার এই অনবদ্ধ্য সাঁতারটি যেন গ্রিনিজ বুকে স্থান পায় তার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য জানান, ১৯৭০ সালে সিলেটের ধুপাদীঘি পুকুরে অরুণ কুমার নন্দীর বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। তিনি আরও জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে সাঁতার শুরুর কথা থাকলেও নানা প্রতিকূলতায় ময়মনসিংহের ফুলপুর সরচাপুর কংস থেকে সাঁতার শুরু করছি। জীবনে অনেক সাঁতার কেটেছি, এটাই হবে হয়তো আমার জীবনের শেষ সাঁতার। মদন নাগরিক কমিটি ও ফুলপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ তাঁরা এমন একটি সাঁতার আয়োজন করার জন্য। 

এদিকে এই সাঁতারুর এমন কৃতিত্বে মদন উপজেলা প্রশাসন, নাগরিক কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের আয়োজনে নদীর পাড়ে হাজারো লোকের সমাগম ঘটে। পরবর্তীতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও নাগরিক কমিটি ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যকে আলাদা আলাদা সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়ালীউল হাসান মদনবাসীর পক্ষ থেকে এই কৃতিত্বকে বিশ্ব রেকর্ডে স্থান দেয়ার দাবী জানান।  

দুরপাল্লার সাঁতারে রেকর্ড গড়লেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য

ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের ক্ষিতিশ চন্দ্র বৈশ্যের ছেলে। তিনি বেসরারিক বিমানের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশ নেন। ১৯৭০ সালে মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে আলোচিত হন ক্ষিতীন্দ্র। সেটিই ছিল তাঁর প্রথম সাঁতার প্রদর্শনী। এরপর ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারি হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথহলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথহলের পুকুরে বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করায় ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে তিনি জগন্নাথ হলের পুকুরে ১শ’ ৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার প্রদর্শন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুর পাড়ে একটি স্মারক ফলক নির্মাণ করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুল, মদন উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং নেত্রকোনা পৌরসভার পুকুরে তার একাধিক সাঁতার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ভারতেরও দূরপাল্লার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে মাত্র ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর জঙ্গীপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন। তিনি সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন।


momenin/mohin

মন্তব্য  (০)

মন্তব্য করুন