ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছেন প্রতিবন্ধী সালাম

পরিতোষ দাস : ইনফোলিডার, চাঁনগাও ইউডিসি, মদন, নেত্রকোণা
প্রকাশ কাল : ২০১৭-১১-০৬ ২২:৫৪:০৮


ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছেন প্রতিবন্ধী সালাম
ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছেন প্রতিবন্ধী সালাম

জীবনের চলার পথ কারও জন্য সুখের, আবার কারও জন্য দুঃখের। কেউ খুব সহজেই আরাম আয়েশে রোজগার করে পরিবারের মানুষদের নিয়ে সমাজে টিকে আছেন, আবার কেউ কষ্টের জীবিকায় সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। সমাজে উঁচু-নিচুর পার্থক্য অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। তবে জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে।

জীবন মানেই বেঁচে থাকার সংগ্রাম। জীবিকার তাগিদে মানুষকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। এমনই একজনের সন্ধান পাওয়া গেছে নেত্রকোনার মদন উপজেলার মদন ইউনিয়নের পরশখিলা গ্রামে। ওই গ্রামের আব্দুল মজিদ বেপারীর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী সালাম। আগে দেখা যেতো, প্রতিবন্ধী মানেই ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ। তবে বর্তমানে চিত্রটা ভিন্ন। মানুষ এখন মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চায়। তেমনি ভিক্ষা না করেই জীবনকে জয় করতে চান সালাম। শারীরিক অক্ষমতা উপেক্ষা করে মদন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মোরগ কিনে সেগুলো মানুষের কাছে বিক্রি করে জীবনের চাকা ঘুরাচ্ছেন তিনি।

সালাম হাসি মুখে জানান, নিজের কষ্টের উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তাঁরে এক ছেলে এবং দুই মেয়ে ও স্ত্রীসহ পাঁচজনের সংসার। ১৫ বছর আগে সালামের টাইফয়েড হয়। চিকিৎসা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। অবশেষে প্যারালাইসিসে পড়ে দুটি হাতেরই শক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিছু দিন ভিক্ষাও করেছিল তিনি। মানুষের কাছে হাত পাতা ভাল না, এই ভেবে বেছে নিলেন মোরগের ব্যবসা। এ ব্যবসা দিয়েই চলছে তাঁর সংসার।

সালাম জানায়, জ্বরে আমার দুইটি হাত অচল হয়ে যাওয়ায় আমি আর কৃষি কাজ করতে পারছিলাম না। সংসার নিয়ে খুবই দুচিন্তায় থাকতাম। নিজের বুদ্ধিতে কিছু টাকা নিয়ে মোরগের ব্যবসা শুরু করি। হাতে নিতে পারি না, তাই কাঁধে করেই মোরগগুলো বহন করি। কোনদিন একশ’ টাকা, আবার কোন দিন দেড়শ’ টাকা রোজগার করতে পারি। আগের চেয়ারম্যান সাহেব আমারে একটি কার্ড দিয়েছিল। পাঁচজনের সংসার, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা চালাতে আমার হিমশিম খেতে হয়।

সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান শেখ মানিক বলেন, সালাম খুব কষ্ট করে ভিক্ষা না করেই এভাবে ব্যবসা করে তার সংসার পরিচালনা করছে। আমার পরিষদের মাধ্যমে কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে যথাযথ চেষ্টা করব।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ওয়ালীউল হাসান জানান, এ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণার জন্য সালামের মতো লোক অনুপ্রেরণা। আসলে ভিক্ষাবৃত্তিতে সামাজিক মর্যাদা নেই। সালামের পরিবার যেন স্বাচ্ছন্দে চলতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


poritush/mohin

মন্তব্য  (০)

মন্তব্য করুন