‘ইঁদুর’ প্রাণিটার নাম শুনলেই এর সঙ্গে চলে আসে ‘বিড়াল’-এর কথা। এই দুই প্রাণির মধ্যে দা-কুমড়ো সম্পর্ক। আবার ‘ইঁদুর’ এবং ‘বিড়াল’ নিয়েও রয়েছে অনেক প্রবাদ-প্রবচন। তবে বিড়ালের চেয়ে ইঁদুর মানুষের ক্ষতি করে বেশি। ইঁদুর আমাদের দেশে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের প্রায় ৫শতাংশ নষ্ট করে। গবেষণায় জানা গেছে, একটা ইঁদুরের মাধ্যমে বছরে ১০-১২ কেজি খাবার নষ্ট হয়। এছাড়া ইঁদুরের দ্বারা অন্যান্য সম্পদের ক্ষতিসহ মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। মূলত এ ক্ষতির পরিমাণ উপলব্ধি করেই ইঁদুর শিকারে উদ্ধুদ্ধ হন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ার শেখ আজিজুর রহমান।
আজিজুর রহমান পেশায় একজন কৃষক। এলাকায় গাছের ডাক্তার নামেও তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। গাছের রোগ-বালাইসহ ফুল, ফল রক্ষায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি সেবা প্রদান করে থাকেন। তিনি বর্তমানে কৃষি সংগঠন ‘গোবরা চারঘাটা কৃষিতথ্য ও যোগাযোগকেন্দ্র (এআইসিসি)'র পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ইঁদুর শিকার আজিজুর রহমানের নিয়মিত কাজগুলোর একটি। প্রান্তিক চাষির পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণকে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, হাঁস-মুরগির খামার কীভাবে ইঁদুর মুক্ত করা যায়, ইঁদুর বাহিত রোগ বালাই এবং পরিবেশ দুষণ থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সে সম্পর্কে উদ্ধুদ্ধ করে থাকেন। বিভিন্ন কৃষি সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণসহ বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টরের মাধ্যমে কৃষিবিষয়ক ছবি দেখিয়ে কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। সারা বছর ধরেই তিনি দোকানে দোকানে ফাঁদ পেতে এবং ফসলের মৌসুমে মাঠে ফসল কাটা শেষ হলে সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রচুর ইঁদুর নিধন করে থাকেন।
আজিজুর রহমান বলেন, 'আমরা সবাই যদি একটু সচেতন হই তাহলে ইঁদুরের এ ক্ষতি থেকে অনেকটা মুক্তি পেতে পারি। পাশাপাশি যে যার জায়গা থেকে ইঁদুর নিধনে কাজ করতে পারলে প্রাণিটির বংশ বিস্তার রোধ করা সম্ভব।’
আজিজুর রহমান চলতি বছর ৫২ হাজার ইঁদুরের লেজ সংরক্ষণ করেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ২০১৭ সালে ইঁদুর নিধনে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখা।
উল্লেখ্য, ইঁদুর নিধনে অবদান রাখার জন্য শেখ আজিজুর রহমান ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিত উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০১৬ সালেও তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় সর্বোচ্চ ইঁদুর শিকারির পুরস্কার লাভ করেন।
DULAL CHANDRA BISWAS/mohin
মন্তব্য (০)