protik , পিরোজপুর || প্রকাশ কাল : 2017-06-10 14:49:07
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কাঁসা শিল্প নতুন করে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। কাঁচামালের মূল্য এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এক সময় এই শিল্পে ধস নামে। অন্যান্য শিল্পপণ্যের সঙ্গে কাঁসা-পিতল সামগ্রী প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। কিন্তু পণ্য তৈরিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ায় এই শিল্প নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
জেলা শহরের উপকণ্ঠে আজাইপুর, আরামবাগ, শব্জরবাটি ও রামকেষ্টপুর গ্রামের মানুষের এক সময় ঘুম ভাঙত হাতুড়ির শব্দে। ভোর থেকে সারাদিন ব্যস্ত থাকত ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। কোনো কারখানায় তৈরি হতো পিতলের কলস, আবার কোথাও কাঁসার বাটি, কোনোটিতে থালাসহ কাঁসা পিতলের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও ঘর সাজানোর সামগ্রী। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হতো কাঁসা পিতলের নানান সামগ্রী। কিন্তু কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং প্লাস্টিক, মেলামাইন, সিরামিক ও স্টিলের জিনিসপত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কাঁসা পিতল সামগ্রীর চাহিদা দিন দিন কমতে থাকে। এছাড়া মজুরি কম হওয়ায় কারিগররাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃটিশ জমানায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শব্জরবাটি এলাকায় যারা কাঁসার বাটি তৈরি করতেন এক সময় তারা এই শিল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। কাঁসার তৈরি জিনিসের ব্যবহার কমে যাওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়েন। তবুও অনেকে এই পেশা আকড়ে আছেন। তাদের ভাষায়, কাঁসা পিতলের কাজে শারীরিক পরিশ্রম খুব বেশি। সে তুলনায় মজুরি কম। এরপরও বাপ-দাদার পেশা হওয়ার কারণে এই পেশা ছাড়তে পারছেন না।
কাঁসা ব্যবসায়ীরা বলেন, কাঁসার বাসন তৈরিতে ব্যবহৃত রাং ও তামার দাম কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় কাঁসা-পিতলের তৈরি জিনিসের দামও বাড়ছে। ফলে এর ব্যবহার ও বিক্রি কমে যাচ্ছে। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে কাঁচামাল রাং ও তামা সহজ শর্তে আমদানিতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। আর কাঁসা-পিতলের বাসন তৈরি করতে যে কাঁচামাল ব্যবহৃত হয় সেগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আনতে হয়। কিন্তু রাস্তায় হয়রানির কারণে অনেক কারখানা মালিক কাঁচামাল আনতে চান না। এছাড়াও কারিগরের অভাব ও হাতে তৈরি করতে সময় বেশি লাগায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এসব জিনিসপত্র তৈরি করার জন্য এখন আধুনিক যন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশ থেকে ওইসব মেশিন আমদানি করার চেষ্টা চলছে। এসব যন্ত্র এসে পৌঁছলে কাঁসা ও তামার জিনিসপত্র তৈরিতে খরচ কমবে। এতে কাঁসা পণ্য ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার ভিতরে আসবে। আর চাহিদা বেড়ে যাবে।
তারা বলেন, স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে এ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল অবৈধ পথে ভারতে চলে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। ফলে ধীরে ধীরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
* নাদিম মোহাম্মদ হাসান: ইনফোলিডার, বিনোদপুর ইউডিসি, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ