Logo

ক্ষমা করো রাঙামাটি

protik , পিরোজপুর || প্রকাশ কাল : 2017-06-20 15:21:39


সালাহ উদ্দীন মাহমুদ আরিফ, ইনফোলিডার, রাঙামাটি

প্রকৃতির সৌন্দর্যের অংশ পাহাড়। পাহাড় কে না ভালোবাসে। আর পহাড় আমাদের যেমন শোনায় আনন্দের গল্প-গান। তেমনি কখনো কখনো পাহাড় বেদনার বাঁশিও বাজায়- যার সুর হয় খুবই করুণ এবং হৃদয়বিদারক।
গত ১২ ও ১৩ জুন পাহাড়ের মাটিচাপার ঘটনা সেরকমই বেদনার সুর বাজিয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে। নারী-পুরুষের তাজা প্রাণগুলো অজান্তেই ঝরে গেলো বোঁটা থেকে। প্রাণঘাতী এ ঘটনার শিকার যারা হয়েছেন তাদের একজন আলিজা। জীবিতাবস্থায় তিনি স্ত্রীকে বলেছিলেন-‘পাহাড় আমাকে যতোটা কাছে টানে, ততোটাই দূরে ঠেলে দেয়’। কে জানত, তার একটি বাক্যই পাহাড়বাসীর জন্য বাণী হয়ে থাকবে। অথচ বাস্তবতা হলো তাই। তার সেই কথাই পাহাড়ি এবং দেশবাসীর জন্য আজ বাণী।
রাঙামাটির মানুষ আর পাহাড় বন্ধুর মতই সার্বক্ষণিক। তবে মানুষে মানুষে বিভেদ নিত্যসঙ্গী যেন রাঙামাটির পুরো শরীরে। পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস ও ঘাত-প্রতিঘাত এ মাটিতে চলে আসছে দীর্ঘকাল থেকে। এ রেষারেষি পরম্পরায় চলছে। ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে আর এক ভাইয়ের হাত। তারপরও আমরা একে অন্যের ভাই, সুহৃদ। আমাদের রক্তের কছম ভালোবাসি প্রিয় রাঙামাটিকে। আমাদের হানাহানি-রেষারেষির ফল প্রকৃতি হয়তো এভাবেই দিল আমাদের। তাই আমাদের কাছ থেকে অভিমান করে চলে গেল আমাদের কিছু অমূল্য প্রাণ। ঘুম থেকে জাগার আগেই ঝরে গেল ফুলগুলো। চিরবিদায়ের ঘণ্টা বাজল তাদের। ঝরে গেল অকালে কতোগুলো প্রাণ। নারী-পুরুষের এ যুগল মৃত্যুর ঘটনা বেদনার স্মৃতি হয়ে থাকবে অনন্তকাল। এ বেদনা শুধু রাঙামাটির মানুষ আর পাহাড়ের জন্যই নয়Ñ দেশবাসীরও।
স্মরণকালের এ ঘটনা খুবই মর্মান্তিক এবং হৃদয়স্পর্শীও। যারা জীবনের ঝুঁকি কাঁধে নিয়ে রক্ষা করে রাঙামাটির মানুষ আর মাটি- সেই সেনা সদস্য ক্যাপ্টেন তানভীর সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে একবারই শুধু দেখে এসেছেন। দ্বিতীয়বার আর বাড়িতে স্ত্রী কাছে ফেরা হলো না তাঁর। তিনিও মাটিচাপায় চলে গেলেন পরপারে। যারা প্রাণ দিয়ে আমাদের জন্য রেখে গেছেন রাঙামাটি। আমরা তাদের জানাই প্রণতি। কামনা করি তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি। মা রাঙামাটি, তুমি ভেব না- তোমার ওপর শুধু আমরা অত্যাচারই করি। আমরা তোমাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। তুমি কি দেখনি, তোমার মৃত সন্তানদের উদ্ধার করতে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কিভাবে এগিয়ে এসেছি। কিভাবে তোমাকে জঞ্জালমুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে কাজ করছি। আমাদের জন্য যোগাযোগ এবং সাহায্য পাঠানোর রাস্তা পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে পাহাড় ধসে। আমরা কি এতোই অপরাধী মা রাঙামাটি! তুমি আমাদের মা। সন্তানদের অপরাধ ক্ষমা করে দাও। আমরা ভ্রাতৃঘাতী নই। আমরা ভ্রাতৃপ্রতিম। আমরা ভালোবাসি তোমাকে। তোমার সন্তানকে। পাহাড়ি-বাঙালি দ্বন্দ্ব-সংঘাত আর নয়- আমরা একে অন্যের হয়েই বাঁচতে চাই। তোমাকে আর আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের তুমি ক্ষমা কর মা। আমাদের তুমি রক্ষা কর।
তোমাদের প্রতি
যারা চলে গেছো ওপরের ঠিকানায়- তাদের জন্য আমাদের হৃদয় ব্যথিত। তোমাদের এভাবে যাওয়ার কথা নয়। আমাদের সব অভিমান, ক্ষোভ আজ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। অতীতেও আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করেছি। তোমরাও তখন আমাদের সাথেই ছিলে। আজ তোমরা নেই। কিন্তু তোমাদের মৃত্যুকে সাক্ষী রেখে শপথ নিলাম- আর সংঘাত-হানাহানি নয় - ‘পাহাড়ি-বাঙালি ভাই ভাই/ভ্রাতৃত্বের বিকল্প নাই’- এ স্লোগানই আমাদের পাথেয়। আমরা এক হয়ে কাজ করে রাঙামাটিকে রক্ষা করব। এ শহরকে কলুষমুক্ত করব। শান্তির বাতাসে ভরে উঠবে রাঙামাটির প্রতিটি জানালা। মা রাঙামাটি, আমাদের ক্ষমা কর। আমরা তোমার সন্তান। তোমারই থাকব।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি
Developed by