Logo

গাইবান্ধার বিখ্যাত রসমঞ্জরি

momenin , ফরিদপুর || প্রকাশ কাল : 2017-08-01 17:31:32


মনোয়ার হোসেন, ইনফোলিডার, ফুলছড়ী ইউডিসি, গাইবান্ধা
মিষ্টান্নজাত দ্রব্যের প্রতি বাঙালির টান আদিকালের। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই তৈরি হয় নানা স্বাদের হরেকরকম মিষ্টি। আবার কিছু কিছু মিষ্টি আছে যা প্রায় দেশের সব অঞ্চলেই তৈরি হয়। তবে একই ধরনের কিছু মিষ্টি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরি হলেও প্রসিদ্ধি লাভ করে শুধুমাত্র দু-এক জায়গায়। তেমনি এক মিষ্টান্নের নাম গাইবান্ধার রসমঞ্জরি। দেশের অনেক জেলার কারিগররা শত চেষ্টার পরও বানাতে পারেনি গাইবান্ধার রসমঞ্জরির মতো এমন মিষ্টান্ন। তাই এখানকার রসমঞ্জরির প্রতি সারা দেশের মানুষের আলাদা আকর্ষণ রয়েছে।
এক-এক অঞ্চল এক-এক মিষ্টির জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে ওই অঞ্চলের কারিগরদের নিপূণতার কারণে। স্বাদ ও গুণাগুণের কারণেই গাইবান্ধার মিষ্টি রসমঞ্জরির রয়েছে আলাদা কদর। গাইবান্ধাতে এসে রসমঞ্জরির স্বাদ আস্বাদন করেননি, তবেতো বলতে হয় গাইবান্ধা ভ্রমণই বৃথা। অতিথি আপ্যায়ন ও আনন্দ অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সবখানেই যে এই রসমঞ্জরির জয়গান।
গাইবান্ধার রসমঞ্জরি এলাকার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, এমনকি বিদেশেও যাচ্ছে। রসালো ঘন দুধের ক্ষীরের সঙ্গে খাঁটি ছানায় তৈরি মারবেল সদৃশ ছোট ছোট গোলাকার রসগোল্লা সমন্বয়ে তৈরি হয় এই মিষ্টি। মুকুল থেকে সদ্য বের হওয়া আমের গুটির মতো রসগোল্লা দুধের ঘন ক্ষীরে ‘মঞ্জরিত’ হয়ে দু’টি ভিন্ন স্বাদের সমন্বয়ে সৃষ্টি করে তৃতীয় মাত্রার অপূর্ব স্বাদ। তাই এই মিষ্টির কাব্যিক নাম ‘রসমঞ্জরি’ (রস+মঞ্জরি)। অবশ্য অনেক এলাকায় এই মিষ্টিকে বলে ‘রসমালাই’।
জানা যায়, এই অঞ্চলে রসমঞ্জরি প্রথম তৈরি করেন গাইবান্ধা শহরের মিষ্টি ভা-ারের মালিক রাম মোহন দে। ১৯৪০ সালে এই মিষ্টি তৈরি শুরু হয় এবং ১৯৫০ সালের দিকে এর সুনাম ও পরিচিতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
গাইবান্ধা জেলা শহরের সার্কুলার রোডের রমেশ ঘোষ মিষ্টান্ন ভা-ারের রমেশচন্দ্র ঘোষ পঞ্চাশের দশকে এই অঞ্চলের রসমঞ্জরিকে গোটা দেশের মিষ্টিপ্রিয় মানুষের কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় করে তোলেন। অবশ্য রসমঞ্জরির আদি স্বাদের যথেষ্ট ঘাটতি এখনকার মিষ্টিতে রয়েছে।
গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভা-ার, রমেশ ঘোষ মিষ্টির দোকান, পুষ্প মিষ্টান্ন ভা-ার, জলযোগ মিষ্টান্ন ভা-ার, সন্তোষ মিষ্টান্ন ভা-ার, কালিবাবুর মিষ্টির দোকান, দেব মিষ্টান্ন ভা-ার ও পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের শিল্পী হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও মিতালী হোটেল, গোবিন্দগঞ্জের মায়ামণি ও বনফুল হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ভাল মানের রসমঞ্জরি পাওয়া যায়।
রমেশ ঘোষ মিষ্টান্ন ভা-ারের বর্তমান সত্ত্বাধিকারী বলরাম ঘোষ জানান, তার দোকানে প্রতিকেজি রসমঞ্জরি ২৮০ টাকা এবং প্রতিপ্লেট ৬০ টাকা ও হাফপ্লেট ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমনকি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানোর ক্ষেত্রে নিজস্ব গোলাকার প্লাস্টিক পাত্রে টেপ দিয়ে এয়ারটাইট প্যাকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
রসমঞ্জরির কারিগর ভক্ত ঘোষ জানান, এই মিষ্টি তৈরির উপকরণে থাকে খাঁটি গরুর দুধ, চিনি, দুধের ছানা ও ছোট এলাচ। গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন ক্ষীর করতে হয় এবং তাতে মেশাতে হয় পরিমাণ মতো চিনি। এছাড়া ছানা দিয়ে ছোট ছোট গোলাকার গুটি তৈরি করে চিনির সিরায় জ্বাল দিতে হয়। বাদামী রং হলে ছাকনি দিয়ে সিরা ঝরিয়ে রসগোল্লার গুটিগুলো ক্ষীরে মেশাতে হয়। পরে ঠা-া করে গুটিসহ ক্ষীর রসমঞ্জরি পাত্রে পরিবেশন করতে হয়।
তিনি জানান, প্রতিকেজি রসমঞ্জরির উৎপাদন ব্যয় পড়ে প্রায় ২৫০ টাকা। দুধ, চিনি, ময়দা, এলাচ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ কারিগরের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এই মিষ্টি তৈরিতে খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রসমঞ্জরি বিক্রেতা অজিত ঘোষের মতে, খাঁটি দুধ প্রাপ্তি ও কারিগরের দক্ষতার ওপরই নির্ভর করে রসমঞ্জরির গুণ, মান ও স্বাদ। তবে বেশি লাভের আশায় ছানা ও ক্ষীরে বেশি পরিমাণ আটা, সুজি ও অন্যান্য ভেজাল মিশিয়ে গ্রামগঞ্জে অনেক মিষ্টির দোকানে নিম্নমানের রসমঞ্জরিও তৈরি হচ্ছে।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি
Developed by