protik , পিরোজপুর || প্রকাশ কাল : 2017-08-06 16:47:34
আমিনুল ইসলাম, ইনফোলিডার, গোয়ালডিহি ইউডিসি, খানসামা, দিনাজপুর
উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার কোল ঘেঁষা অন্যতম উপজেলা-খানসামা। এ উপজেলায় যেমন রয়েছে ফুল, ফল ও ফসল ভরা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, তেমনি রয়েছে খনিজ সম্পদ, ঐতিহ্য আর স্থাপত্য। যার মধ্যে আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের পুরার্কীতি জয়গঞ্জ জমিদার বাড়িটি উল্লেখযোগ্য। এটি উপজেলার প্রাণকেন্দ্র পাকেরহাট থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে এবং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আত্রাই নদীর ধারে ছায়া ঘেরা গ্রাম জয়গঞ্জে অবস্থিত।
শ্রুতি আছে, জমিদারি আমলে এ অঞ্চল দেখভাল করতে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জমিদারি প্রথা রদ হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে ওই বাড়ির সর্বশেষ জমিদার জয়শঙ্কর ভারতের শিলিগুড়িতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। রেখে যান পৈত্রিক সূত্রে ভাগে পাওয়া প্রায় এক’শ একর জমিসহ বসত বাড়িটি। পরবর্তীতে এসব জমির কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং কিছু অংশ সরকারি খাস জমিতে পরিণত হয়।
বর্তমানে খাস জমিতে থাকা পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা একতলা ভবনে ৩টি বারান্দা, ১টি বসার ঘর, ১টি থাকার ঘর, মালামাল রাখার ১টি ছোট ঘর এবং একটি ঘরে মন্দির রয়েছে। যা এক সময় জমিদারদের বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হতো। বাড়িটির তিনটি বারান্দায় ৩০টি পিলার এবং পূর্ব থেকে প্রথম ঘরটিতে ৯টি দরজা এবং সভাকার্য পরিচালনার ঘরটিতে ১০টি দরজা রয়েছে।
সংস্কারের অভাবে বাড়িটির দেয়ালের প্রায় ৩০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। সংস্কার করলে আবারও নতুন রূপে দাঁড়াবে জমিদার বাড়িটি। এছাড়াও জমিদার বাড়ি থেকে পূর্বে কয়েক গজ দূরে একটি অকেজো ইন্দিরা রয়েছে।
২০০৬ সালে উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ দিন অযত্নে পড়ে থাকা বাড়িটির চারপাশের ঘন জঙ্গল পরিস্কার করে ৫০টি পরিবারের একটি গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করে। এতে ঐতিহ্যময় জমিদার বাড়িটি জঙ্গলের হাত থেকে রক্ষা পেলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পচ্ছে না। আশ্চর্যের বিষয় হলো ওই বাড়ির প্রবেশ দ্বারে যে লোহার গেটটি ব্যবহার হতো তা এখন খানসামা থানার প্রবশ পথে ব্যবহার হচ্ছে। আর জমিদারের ব্যবহৃত লোহার সিন্ধুক এবং ঘাটে জাহাজ বাঁধার কাজে ব্যবহৃত নোঙরটি আলোকঝাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে।
শুধু তাই নয়, জমিদারি আমলে প্রতিষ্ঠিত জমজমাটভাবে চলা জয়গঞ্জ বাজারটিও প্রায় ২০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু দাঁড়িয়ে আছে হাটের মাঝখানে থাকা জমিদারি আমলে লাগানো বটগাছটি। বর্তমানে হাটের ওই জায়গাটির পশ্চিম পাশে একটি মসজিদ এবং উত্তর পাশে একটি মন্দির ও হরিবাস স্থাপিত হয়েছে। আর বাকি অংশ জুড়ে নতুন করে বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে। তবে হাটটি জয়গঞ্জ-ভবানীগঞ্জ ও খানসামা সড়কের মোড়ে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বাড়িটিতে গিয়ে জানা যায়, এর তিন পাশে ৩টি পুকুর রয়েছে। এছাড়াও জমিদার জয়শঙ্করের লাগানো ৭টি লিচু গাছ, ৪টি আম গাছ (১টি মৃত), ২টি বকুল গাছ, ১টি খিরোন ফলের গাছ, ৩টি তালগাছ ছাড়াও ৪টি সেগুন গাছ (১টি মৃত) ও ১টি শাল গাছ আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
জমিদার জয়শঙ্কর পরিবারসহ বাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার পর তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তির মালিকানা পেতে ওই এলাকার অনেকে জমিদার পরিবারের লোকদের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারা তাদের আবেদনে সাড়া দেননি।
এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ আকছাদ আলী, জামাল উদ্দিন, জহুর আলী এবং সবেজা বেগম বলেন, এ বাড়িটিতে একসময় জমিদাররা বসবাস করতেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর তারা এখান থেকে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে বাড়িটা খালি পড়ে আছে। বাড়ির চারপাশে ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। পরবর্তীতে সরকার জঙ্গল পরিস্কার করে গুচ্ছগ্রাম করে দেওয়ায় অনেকে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটির বেশির ভাগ অংশ এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। বাড়িটি সংস্কার করা হলে, এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। অন্যথায় যতটুকু রয়েছে তাও এক সময় ধ্বংস হয়ে যাবে।