mohin , || প্রকাশ কাল : 2018-05-03 13:41:52
মো. ইসরাইল কবির, ইনফোলিডার, হালসা ইউডিসি, নাটোর
মা যদি শিশুকে ডাক দেন, তাহলে সব যন্ত্রণা ভুলে যায় শিশুরা। কারণ মা-ই শিশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আর সে মা যদি হন কোনো জেলা প্রশাসক (ডিসি); আর শিশুরা যদি হয় অনাশ আশ্রমের শিশু- তাহলে অবশ্যই তা নতুন এক মানবিকতার জন্ম দেয়। নাটোরের জেলা প্রশাসক সেরকমই এক মানবিকতার জন্ম দিয়েছেন। মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অনাথ ৮৪ শিশুকে দিয়ে যাচ্ছেন মাতৃসেবা।
৮৪টি শিশু নিয়ে নাটোরের অনাথ শিশু সদন। এ শিশুদের চুম্বন করে সদনের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন নাটোরের ডিসি শাহিনা খাতুন। নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া শিশু সদনটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৯৫ সালে সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীনে নিবন্ধন লাভ করে। এটি একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত হয়।
সদনের বালিকা শিক্ষার সচিব মোস্তাক আলী মুকুল জানান, গত ৩০ বছরে আমি প্রায় ২০ জন ডিসিকে দেখেছি। কিন্তু বর্তমান ডিসি শাহিনা খাতুন ব্যতিক্রম। যখন তিনি জানলেন যে, দিঘাপতিয়ার ৮৪টি অনাথ মেয়েশিশু আশ্রিত এবং সদনটি একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অর্থে চলে তখন তিনি এটির খোঁজ নেন। এর পর তিনি নিজ থেকে শিশুদের দেখাশোনা শুরু করেন। শিশুরা তাঁকে আম্মা ডাকা শুরু করে। তিনিও নিজের সন্তানের মতোই দেখেন মা-বাবা ছাড়া ৮৪ শিশুকে। ‘মা’ শব্দটি তাদের কাছে শুধুই মা নয়- এটি তাদের কাছে একটি প্রতিষ্ঠান।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নাটোর জেলায় যোগদানের পর ডিসি শাহিনা খাতুন সদনটির আমূল পরিবর্তন আনেন। পুরনো বাড়িটির সীমানাপ্রাচীর, বিছানাপত্র, ডাইনিং রুম এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঢেলে সাজান। তিনি আশ্রমের সব মেয়েকেই নিজের সন্তানের মতো করে খাওয়ান। এখানে রয়েছে এক থেকে ১৮ বছর বয়সী অনাথ শিশু। জেলা প্রশাসক সপ্তাহে একবার সদনটি পরিদর্শন করেন এবং শিশুদের অনুপ্রাণিত করেন। তিনি অনাথ মেয়েদের লেখাপাড়া শিখে শিক্ষিত হওযার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি শিশুদের কারো সঙ্গে অপমান-অসম্মানসূচক ভাষা ব্যবহার না করার উপদেশ প্রদান করেন।
অনাথ শিশুদের একজন রশিদা খাতুন বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তিনি আমাদের দুটি কন্যাকে একই পোশাক দিয়েছেন।’ শশী খাতুন বলেন, আগামী ১০ বছরে এসএসসি পরীক্ষায ১০ শিক্ষার্থী অংশ নেবে শিশু সদন থেকে।’ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে, আমাদের নাটোরে এমন একজন ডেপুটি কমিশনার রয়েছেন, যিনি মায়ের মতো।’
ডিসি শাহিনা খাতুন বলেন, ‘আমি সব সময় আমার দুই মেয়েকে বলেছি, আমার আরো ৮৪টি কন্যা আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন মানুষ তার জীবনে অনেক কিছু করতে পারেন না, কিন্তু যখন কোনো দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তি এমন অনাথদের জন্য এগিয়ে আসেন তখন তারা জীবনে প্রতিষ্ঠা পায় এবং সামাজিক মর্যাদা লাভ করে। সম্প্রতি এখানকার মেয়ে সুরমা খাতুন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি পেয়েছে এবং রাশিদা খাতুন নামের আরেকজনকে যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশে চাকরি দেওয়া হয়েছে, যা আমাকে অনেক খুশি করেছে।’
তিনি বলেন, স্বেচ্ছাভিত্তিতে ৮৪ জন শিশুকে নিয়মিত খাওয়ানো খুবই কঠিন। এ কারণে সরকারি তালিকায় অনাথ আশ্রমটি অন্তর্ভুক্ত করানোর চেষ্টা চলছে।